Friday, 29 July 2011

হরিশরাজার জঙ্গলে- পর্ব ১

রবিবারের সকালবেলা পুঁটু খালের ধারে দাঁত মাজতে গিয়ে দেখল বৈঁচি ঝোপের ধারে গোবিন্দখুড়ো শালমুড়ি দিয়ে ওত পেতে বসে আছে। খুড়োকে প্রায়শই ওরকম ওত পেতে বসে থাকতে দেখা যায়। শেষ দেখা গিয়েছিল কালীগঞ্জের নবীন মহাজনের বাড়ীর সামনের পুঁইমাচার পাশে। তারও আগে জলবেহারীর সেলুনের দোকানে, কিংবা হাঁসপুকুর কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের উইথড্রয়াল সেকশনের সামনের বেঞ্চে। প্রতিবারেই খুড়ো শালমুড়ি দিয়ে সন্দেহজনক ভাবে বসে থাকে মুখ নাক চাপা, খালি চোখ দুটো বেশ জ্বলজ্বল করছে, যেন একেবারে সব দেখে ফেলছে। যারা খুড়োকে চেনে জানে তারা কিছু না বলে সবজান্তা মুচকি হেসে পাশ কাটিয়ে চলে যায়অবিশ্যি যারা জানে না তারা ব্যাপারখানা মোটেই ভালো চোখে দেখে না।  মনে নেই, সেই যেবার  হাটের সময় খুড়ো শিবু ময়রার জিবেগজার দোকানের পাশে ওই রকম শালমুড়ি দিয়ে বসে ছিল। খাঁ খাঁ রোদে খামোখা শালমুড়ি দেওয়া কেন বাপু? তা, ওটা নাকি হল ডিসগাইজ। শিবু অতশত বোঝে না, খুড়োকে ধরে এই মারে তো সেই মারে। ভাগ্যিস স্টেশন মাস্টার হরিহরের শ্বশুরবাড়ি ওদিকে। খবর পেয়ে সেই কোনমতে ছাড়িয়ে এনেছিল।
     আসল ব্যাপার হল খুড়ো নাকি একেবারে খাঁটি নিয্যস ভালো নির্লোভ লোক খুঁজে বেড়াচ্ছে। তা, ওরকম লোক পাওয়া কী চাট্টিখানি কথা নাকি? ওসব লাখে একটা দুটো মেলে, তাও ওদের বেশ তোয়াজ করতে হয়। ওদের আবার যখন তখন ভীষন খিদে পায়। শালপাতার ঠোঙায় মুড়ি জিবেগজা না ধরেছ কি অমনি ওরা মুখ হাঁড়ি করে। এই যে সব এত এত ভালোমানুষের মত মুখ করে হাটে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে, খোঁজ নিয়ে দেখ, এক একটা সব পাজির পাঝাড়া। খাঁটি নির্লোভ লোক সব নাকি চুপিসাড়ে আড়ালে আবডালে রয়েছেঝপ করে ঠিক লোক দেখে যদি লাফিয়ে পরে চেপে না ধরেছ তো একবারে ফুরুৎ। ঐ ফঙ্গবেনে ব্যাপার আর কি।
‘কি গো খুড়ো, আজ কাকে...’
‘শসসস। এই বারে পেয়েছি বুঝলি...’
খালের ধারে নব সামন্ত নিবিষ্ট মনে মাছ ধরছে। সর্বনাশ খুড়ো ওকেই ভালো লোক ঠাউরেছে নাকি? পুঁটু জানে নব সামন্ত মোটেই ভালো লোক নয়। জলবেহারীর দোকানে গিয়ে আটাআনার চুল সে দরদাম করে চার আনাতে কেটে এসেছে এ তো পুঁটুর নিজের চোখে দেখা। তাছাড়া ওর পাশের গুপী মাস্টারের বাড়ীর আমগাছ থেকে কে রাতের বেলা আম চুরি করে। ওর গোয়ালে যে সোনামুখী বলে গরুটা সকালবিকেল বিচালি চিবোয় ওকে নিয়ে ওর সাথে পাশের গ্রামের ঘোষেদের মামলা নেই বুঝি।
     খুড়ো পেছন থেকে লাফ দিয়ে একেবারে নবর ঘাড়ের কাছে এসে পড়ে জামার কলার চেপে ধরল‘আই বাপ’, বলে নব ভিরমি খায় আর কি।
‘অ্যাঁ, কি ব্যাপার খুড়ো, এসব কি? না বলে কয়ে পেছন থেকে এমন ভাবে
‘আ হা হা, চুপ কর বাপ আমার। এতদিনে খুঁজে পেয়েছি। ওরে কে আছিস, উলু দে, শাঁখ বাজা, ধরাধামে আবার প্রভু নিতাই নেমে এলেন রে
‘ও খুড়ো, ও মোটেই ভালো লোক নয় গো, ও তোমার চাঁদ আঁকা নস্যির কৌটো, যেটা তুমি গত মাসে চন্ডীমন্ডপ থেকে হারিয়েছ, সেটা হাতিয়েছে’ পুঁটু চেঁচিয়ে উঠল।
‘অ্যাঁ, বলিস কী? তবে যে স্বচক্ষে দেখলাম, ওতবড় রুইমাছটা পেয়ে ও হাত বুলিয়ে ছেড়ে দিল।’
‘আরে ওর তো দাঁতই নেই, কাঁটা চিবুবে কি করে? হয়ত ঘ্যাঁসা মাছ ধরার তালে ছিল।’
কথাবার্তার ফাঁকে খুড়োর হাত একটু আলগা হয়েছিল। এক ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে নব পাশের খাগড়া বনে সুট করে সেঁধিয়ে গেল। এক ঝলক সেদিক পানে তাকিয়ে খুড়ো করুণ চোখে বলল, ‘ধুস! পরিশ্রমটাই বৃথা। একটা নিপাট ভাল লোক কোথা পাই বলত
ফিক করে হেসে ফেলল পুঁটু। ‘খুড়ো তুমি বরং অন্য কিছু খোঁজ। যেমন ধর সবচেয়ে বোকা লোক খুঁজছ। তা সে আমাদের ঘোষের পো কেই ধর না কেন। কিংবা সবচেয়ে চালাক আমাদের কানাই মাস্টারের ছেলে পটলা। হয়ত সবচেয়ে লম্বা লোক খুঁজছ, এক ধাক্কায় পেয়ে গেলে শিবতলার ফটিক কেসবচেয়ে বেঁটে যদি চাও তো ওরই ভাই বটুক। সবচেয়ে ধড়িবাজ বিশু গায়েন, সবচেয়ে কেপ্পন আমাদের মহাজনের পো
‘ওসব নয় রে ভাই, আমার একখানা খাঁটি, নিরেট, বোকা, ভালো মানুষ চাই যার মনে লোভ নেই।’
‘ও খুড়ো তুমি একজনের মধ্যে পাবে না। যেমন ধর বিশু ধড়িবাজ হলে কি হবে একেবারে খাঁটি লোক, আবার পটলা ভীষন বিচ্ছু হলে কি হবে মন খুব ভালো। সেই যে সেবার দোলের দিন বিশুকে জলবিছুটি ঘষেছিল, তাপ্পর সারা গা চুলকোতে চুলকোতে নুন ছাল ওঠার পর ওই তো আবার টিংচার আয়োডিন লাগিয়েছিল, তারপর ধরো
‘আঃ মেলা বকিস না তো, সন্ধানে থাকলে বল না বাপ, দুটো পয়সার মুখ দেখি।’
     খালের ধারে যখন এইসব কথোপকথন চলছে তখন হাঁসপুকুরের চন্ডীমন্ডপে কবিরাজ মশাই আধশোয়া হয়ে হুঁকো খাচ্ছেনগদাই পালোয়ান ডাম্বেল ভেঁজে ছ ছটাক ছোলা খেয়ে কুস্তি করতে লেগেছে। গুপীবাবু ধুতি মালকোঁচা মেরে বাজারের দিকে চলেছেন। হাঁসপুকুর পুলিশ ফাঁড়ির দারোগাবাবু দুগ্ধবরন বাপুলি স্বপ্নে জামাইষষ্ঠী সারছেন। গাঁয়ের চাষাভুষোর দল হাল বলদ নিয়ে রোজকার খেতখামারি করতে চলেছে। ডিটেকটিভ সত্যরঞ্জন চাকলাদার তাঁর সাকরেদ গবু কে নিয়ে তাঁর বাড়ির সুপুরি গাছের তলায় ক্লু খুঁজতে বেরিয়েছেন। হাঁসপুকুর স্টেশনারির মালিক শতদল ঘোষ ঘুমোতে ঘুমোতে পাশ ফিরছেনজগা পাগলা কালীবাড়ির রোয়াকে শুয়ে আড়মোড়া ভাঙছে। চালের ওপর কুঁকড়োরা সবে ডাকাডাকি করতে শুরু করেছে। মোটকথা গোটা হাঁসপুকুর রাতশেষে ঘুম সরিয়ে উঠিউঠি করছে।
     এমন সময় সুপুরিগাছের তলায় টেক্কামার্কা দেশলাই পাওয়া গেল। বিরাট ক্লু। সত্যরঞ্জন চাকলাদার তাঁর মসৃন গোঁফে তা দিলেন।
‘কেমন, বলিনি?’
গবু একটু অবাক হয়ে বলল, ‘ইয়ে, কিন্তু এটা দেখে কি বোঝা গেল?’
‘মূর্খ। এই দেশলাই এখানে পাওয়া যায় নাকি।’
‘তাইতো, তাহলে এল কোথা থেকে?’
‘গবেট। আরে এটা নির্ঘাৎ বাইরের কেউ এনেছে।’
‘বাইরের লোক?’
‘হ্যাঁ, এবার বল দেখি, গত ক’দিনে বাইরের কেউ হাঁসপুকুরে এসেছে কিনা।’
‘কই এমন দেখিনি তো।’
‘হুঁ হুঁ, তাহলেই বোঝ, যে এসেছে সে গা ঢাকা দিয়ে আছে।’
‘আরিব্বাস, এ তো রহস্যের খাসমহল। কিন্তু কি মতলব হতে পারে?’
সত্যরঞ্জন গম্ভীর ভাবে বললেন, ‘মতলব বিরাট বড় কিছু হওয়া বিচিত্র নয়। হয়ত কোন আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারীরা এর মধ্যে জড়িত, কিংবা তার চেয়েও বড় কোন রহস্য, হয়ত কোনো গুম খুন।’
‘উরেব্বাবা’, গবুর চুল খাড়া খাড়া হয়ে উঠল।
‘কিন্তু এসবের চেয়েও বড় প্রশ্ন সে লুকিয়ে আছে কোথায়?’
‘ইয়ে, এটা তো আমাদেরই সুপুরি গাছ। তাহলে কি আমরাই কাউকে লুকিয়ে রেখে
‘চোপ ইডিয়ট। কেউ হয়ত আমাদের ফাঁসাতে চায়
‘অ্যাঁ
‘শোন, চারিদিকে নজর রাখবি। সন্দেহজনক কিছু দেখলেই আমাকে খবর দিবি।’
‘ইয়ে সন্দেহজনক কি করে বুঝব। ওই যেবার সোনামুখীর গলায় বাঁধা ঘন্টা দেখে আপনার যেমন সন্দেহ হয়েছিল, ওইরকম
‘উফফ। আবার ঐসব কথা।’
‘না মানে, ঐ যে গরুর পেছনের পায়ে ‘এ’ লেখা দেখে, সেই যে মনে পড়েছে, হ্যাঁ, হ্যাঁ
‘চুপ করবি। বলেছি তো যারা চট করে কথা বলতে চায় না, নাম জিজ্ঞাসা করলে পিটপিটে চোখে তাকায়, যাদের প্যান্টের পেছন দিকের পকেটে চিরুনি থাকে আর কান খাড়া করে চায়ের দোকানে বসে গল্প শোনে তারা সবাই সন্দেহজনক। আচ্ছা শোন এখন আমি বাজার করতে চললাম। আর খবরদার রাত বারোটার আগে দরজা ধাক্কাবি না।’
‘আজ্ঞে, যা বলবেন।’
সত্যরঞ্জন চাকলাদার একবার চারপাশ দেখে নিয়ে বাড়ীর ভেতর ঢুকে পড়লেন। তাঁর গিন্নী সৌদামিনী দেবী এখনো বিছানা ছেড়ে ওঠেন নি। গা ভর্তি সোনার গয়না পরে পালঙ্কে শুয়ে তবিয়ত যাচাই করছেন। খাটের কোনে মোটাসোটা বেড়ালটা একপাশে কাত হয়ে শুয়ে ঝিমোচ্ছে। সত্যরঞ্জন বাবু তাঁর বাজারের ব্যাগ নিয়ে চুপিসাড়ে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। অবশ্য সামনের দরজা খুলে বেরোনোই যেত, তবে কিনা পেছনের দরজা খুলে পুকুরপাড় ঘেঁষে কচুপাতার আর আগাছার ঝোপ পেরিয়ে ধুতির কোঁচায় এতটুকু কাদা না লাগিয়ে ঘাসজমি টপকে বড়রাস্তায় পৌঁছনোর যে আনন্দ তা ডিটেকটিভ ছাড়া আর কেউ বুঝবে কি?
     এদিকে হাঁসপুকুর অপেরার একনম্বর পালাকার গগন চৌধুরী তাঁর খানসামাকে খুঁজে পাচ্ছেন না। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তাঁর ফুলকো লুচি, চাকা চাকা বেগুনভাজা, বড়সড় কাপে এলাচ দেওয়া চা খেতে ইচ্ছে করছিলহনুমানের অনুমান পালার শেষ ক্ল্যাইম্যাক্সটা জুত করে লিখতে হবে না? অপেরামালিক চৌধুরী মশাই তো রোজদিন হত্যে দিচ্ছেন। এদিকে দুম করে তাঁর কবেকার কাশীবাসি পিসী এসে হাজির। দুবেলা মাংসের সুরুয়া খাওয়া তো ঘুচেইছে, উলটে চিরতার জলে আমলকি গুলে খেতে হচ্ছে। তাঁর পেয়ারের খানসামাটি কি পিসীর ভয়েই কেটে পড়ল? আহা রাঁধত বড় ভাল।
—‘গগন, উঠেছিস বাবা?’
গগনবাবু ইজিচেয়ারে শুয়ে আলিস্যি ভাঙছিলেন। পিসীমার ডাক শুনে ধড়ফড় করে উঠলেন। নির্ঘাৎ মহিলা চিরতার গ্লাস নিয়ে এদিকপানে আসছেন। তড়িঘড়ি দোতলার জানালার পাশের গাবগাছ বেয়ে হাঁচোড়পাঁচোড় করে গগনবাবু সড়াত করে মাটিতে নেমে এলেননামার সময় হাতের কনুই আর হাঁটুর নুনছাল উঠে গিয়ে বেশ জ্বালা জ্বালা করতে লাগল। দূর দূর, এভাবে ভদ্রলোক থাকে। বাজারের দিকে গিয়ে বরং একটু সিঙ্গারা জিলিপির সুলুকসন্ধান করা যাক।
পেয়ারা গাছের পেছনে দাঁড়িয়ে ধড়িবাজ বিশু গগনবাবুর পলায়ন বেশ নিবিষ্ট মনে দেখছিল। গগনবাবু ধুতির কোঁচা, আন্ডারওয়্যার সব সামলে হাঁটা লাগাতেই সে বাইরে বেরিয়ে এসে গলাখাঁকারি দিয়ে সঙ্গ নিল
—‘আপনার পিসিমা আমাকে কাল ক্ষীরের নাড়ু দিলেন
—‘যা যা, তোর আবার কী চাই?’
—‘এই বড় বড় গোল গোল নাড়ু
—‘সরে পড়, আমার কাজ আছে।’
—‘তা তো বটেই, তা তো বটেই। নিশ্চয় বেশ দরকারী কাজ, নইলে কেউ সিঁড়ি থাকতে ওইভাবে নামে।’
‘বেশ করেছি, তোর কি। আমার বাড়ী, আমার সিঁড়ি, আমার গাছ। আমি সিঁড়ি দিয়ে নামব না গাছ বেয়ে সেটা আমি বুঝব’ গগনবাবু হুঙ্কার দিলেন।
বিশু মোলায়েম গলায় বলল, ‘আজ্ঞে একশোবার, একদম হক কথা। তবে কিনা নিজের বাড়ীর সিঁড়ি দরজা জানলার খবর কজন আর সঠিক রাখে বলুন
—‘বটে!’
­—‘আজ্ঞে একেবারে নিয্যস কথা। এই দেখুন না, কালীগঞ্জের মহাজনের বাড়ীতে এই যে এতবড় ডাকাতি হল, ওরা কি জানত ওদের রান্নাঘরের মাঝের শিকদুটো একটু চাপ দিলেই খুলে যায়। না কি ওরা জানত যে ঐ অতবড় আমগাছের ডাল বেয়ে পাঁচিল পেরিয়ে একদম সটান ভেতরবাড়ীতে ঢুকে পড়া যায়।’
—‘তুই জানতিস নাকি?’
—‘আজ্ঞে জানতুম মানে, একশবার জানতুম। মহাজন একবার বলুক দেখি ওকে গিয়ে আমি সাবধান করে দিইনি। বদলে কী জুটল মশয় জানেন, স্রেফ গলাধাক্কা।’
—‘বটে’
‘আজ্ঞে ওই তো কটা টাকা, ওটুকুর জন্য আর এমন কি বলুন। ওটুকু তো মানুষ ভালবেসেই দিয়ে দেয়। এই দেখুন না, কালু গুন্ডার দল কেমন গুনীর কদর করতে জানে। ট্যাঁক ভর্তি করে সেলামী তো দিয়েইছে আবার লুটের বখরাও পেলুম।’ বিশু ভক্তিতে একেবারে নুয়ে পড়ল।
—‘তাই বলছিলুম, এই যে সঠিক খবর সঠিক লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়া, এর দাম আর কতজন দেয়?’
গগনবাবুর একটু অস্বস্তি হল।
—‘ইয়ে পিসিমা বেশ খানদানী বুঝলি। তাছাড়া চিরতার জলটা মোটেই ভাল নয়।’
—‘আজ্ঞে হক কথা। পিসিমাও ওই কথা বলছিলেন। সব কথাই তো হয়। এই যেমন সেদিন বললেন, আপনি নাকি ঘুমের মধ্যে কান্নাকাটি করেন, তারপর এই এতবড় বয়সেও নাকি বিছানাতে—’
—‘আহা চুপ চুপ। এই সকালবেলা আবার ঐ সব কথা কেন। আচ্ছা এই নে দশটা টাকা দিলাম। ঘুনাক্ষরেও যেন কেউ টের না পায়।’
বিশুর মুখ গম্ভীর হল। ‘আপনি আমায় অবিশ্বাস করেন। রেখে দিন মশাই আপনার টাকা। আমি সত্যের পুজারী, আমি বীর বিপ্লবী, আমি—’
—‘আচ্ছা আচ্ছা এই নে, কুড়িটা টাকা দিলুম তোকে।’
বিশু টাকাটা নিয়ে ফের ভক্তিতে নুয়ে পড়ল। ‘আপনি নিশ্চিত থাকুন, এসব কথা পাঁচকান হবে না। এটা আমার পোফেশানের সাথে জড়িত, হেঁ হেঁআচ্ছা আসি তাহলে, অন্য দরকারে লাগলে বলবেন, একটু সেবা করে যাব।’
‘আচ্ছা যাও বাপু। পরে তোমায় খবর দেবখন।’
বিশু ফের পেয়ারা গাছের পেছনে অদৃশ্য হল। গগনবাবু বিরক্ত হয়ে খানসামাটার কথা ভাবতে ভাবতে বাজারের দিকে হাঁটা দিলেন। তালডুমরি গাছের ওপর থেকে ফরসাপানা রোদ এসে সকাল ভরিয়ে দিয়েছে। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে চলতে হবে। নতুবা জীবনের দোকানের সিঙাড়া শেষ হতে আর কতক্ষন।

No comments:

Post a Comment