Thursday, 29 September 2011

কাপড়ে জানালা নেই

ইউরেকা আবিষ্কারের পর আর্কিমিডিস তো ভাবেননি তিনি নগ্ন।
ওদিকে ওরা প্রত্যেকে ইউরেকা হয়ে নগ্নতা ভেবে চলে।
উদাহরণ,
এদিকে তারকাখচিত রাত আর ওরা দূরে বসে কাঁপে’,
শুধু তাই নয়,
কাপড় চোপড় দিয়ে ঢাকে 
শরীর জুড়ে অসংখ্য উৎসুখ চোখ।
আর প্রতিবার আউড়ে নেয়
ঘুমচোখে, 
হে নিউটন,
পাপ ফের আপেল থেকেই শুরু হোক।

Friday, 23 September 2011

নক্সী কাঁথা মন - ৫


জন্ম জন্মান্তর মানেন? আমি মানি মশাই, সেকারণে ট্রাম দেখলে ভয় পাই। (ইনিশিয়ালি অবশ্য পেতাম না। তারপর অব্যেস হয়ে গেছে।) থিয়সফিক্যাল ব্যাপার-স্যাপারে আমার বেজায় আগ্রহ। মাদাম ব্লাভাৎস্কিকে মাথায় করে রাখি। ফলে বিভিন্ন স্থানে আত্মার অবিনশ্বরতা নিয়ে তুমুল তর্কে যোগদান করি। খালি, ঐ যেবার ঘোতন আঁক কষে দেখাল আত্মা ইকোয়ালটু জিরো, সেদিন অবশ্য একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিল। চারটে সেলাই আর চোয়ালে ব্যাথা নিয়ে
যাক গে, মোটকথা আত্মা-ফাত্মা, ভূত প্রেত সাপ ব্যাঙ টিকটিকি এসব নিয়ে আমি খুব সিরিয়াস। আলোচনায় ফিলসফির সাথে থিয়সফি মিশে গেলে তো কথাই নেই। তখন নাকি আমার মাথার পেছনে ফসফরাস মার্কা গ্লো দেখা যায়। আমি অবশ্য এই নিয়ে অর্বাচীনদের ফিসফিসে কান দিই না। জীবনে আধ্যাত্মিকতাই আসল।
এত সব বলার কারণ হল, ব্রাউন প্যাকেটের ঝুলির ভেতর থেকে দ্বিতীয় যে বেড়ালটি বেরোল তার শিরোনামআত্ম চাহিদা। কবিতা নয়। দস্তুরমতো প্রবন্ধ। ফিলসফি ফিলসফি গন্ধ। মনের ভেতর কেমন গদগদ ভাব টের পেলুম। এই হল গিয়ে প্রকৃত প্রবুদ্ধ মনের শিল্পিত ভাস্কর্য। ওইসব কবিতা-ফোবিতা তো ছেলে ছোকরাদের চ্যাংড়া মনের ল্যাঙড়া প্রেম। প্রবন্ধ লেখার জন্য যেবিদগ্ধমন দরকার তা কয়জনার আছে। সেই প্রবন্ধের কীয়দংশ এক্ষণে উদ্ধৃত করিব।

প্রথম অনুচ্ছেদঃ

কী কী করিলে আত্ম তুষ্ট হয় ইহা আমাদিগের আত্মাকে প্রশ্ন করিলে তাহার কি বা কেমন উত্তর হইবে, কী ভাবেই বা তাহার উত্তর দিয়ে থাকিবে সেই সকল সম্মন্ধে কেবল আমাদিগের আত্মাই জ্ঞাত। উপরন্তু ইহা এমনই একনিষ্ঠ প্রকারান্তরের মধ্যম বস্তু হইয়া একস্থানে নতুবা তুষ্টের ত্বরে অন্য কোন স্থানে গমনাগমনে উদবিঘ্ন হইয়া থাকে ইহার চারিত্রিক ত্রুটি বিচ্যুতি বৈচিত্রময়। আবার তাহা ইহাকেই গমনাগমনে উদ্ভিঘ্ন করিয়া চাঞ্চল্য কর এক বিচ্ছিন্ন প্রকৃতি প্রস্তুত করিবার তরে সদা প্রস্তুত। অভিমুখ ত্রুটি ইহার সর্বাপেক্ষা নান্দনিক বিষয় বলিয়া, ইহা অন্তর ধ্যান করিয়া সেই সুচারু অভিমুখে, যেখানে ইহাকেই সকল পাইবে ভাবিয়া থাকে।

না, ভূমিকম্প হয় নি। যা লিখিত ছিল তাহাই বিধৃত করিয়াছি। কিন্তু ভাষার সতেজ ভাবটা লক্ষ্য করেছেন কি! উত্তরের মধ্যেই প্রশ্ন, এবং প্রশ্নের মধ্যেই উত্তরের আত্মগোপনটা দাদাআআআ কেমন সহজ করে বুঝিয়েছেন। এরকম অনেকটা দেখা যায় প্যান আমেরিকান কালচরে বা ইনকাদের পিরামিডের ওপর। প্রথম অনুচ্ছেদ পড়েই মাইরি মনটা গভীর শান্তিতে জুড়িয়ে গেল। চারপাশে টের পেলুম অপার স্নিগ্ধতা জুড়িয়ে এসেছে। মস্তিষ্ক চিরকাল মোর শিরঃপীড়ার প্রধান কারণ, এক্ষণে সেটি জবুথবু হওয়ামাত্র ইন্দ্রিয়াতীত সুখ টের পাইতেছি। ভাবরসে শান্তিপুর ডুবুডুবু। মনে হইল, সত্যই বটে, আত্মা শালা কখন কি করিবে কেমনে জানিব! গেছোদাদার মতো কোথায় রয়েছে তা জানাও না-মুমকিন। বউয়ের বেহিসেবি বলিয়া তিরষ্কার, প্রকৃতপক্ষে ঐ নান্দনিক বিষয়। মূর্খ স্ত্রীলোক, না বুঝিয়াই প্রশংসা করিয়া ফেলিয়াছে। যাহা হউক, পরের অনুচ্ছেদে কি রহিয়াছে?

যাহারা ইহাকে একান্ত ভাবেই আপন করিয়া লইয়াছে তাহারা জীবনে ইহার হস্ত যূপকাষ্ঠে বলি হইয়া নিঃশেষ হইয়া গিয়াছে। ইহাও একটি ইহার বৃহৎ বৈশিষ্ট্য। ইহা কাহাকেও পর বলিয়া ভাবিয়া থাকে না। অপরকে আত্মহনন পূর্বক ইহা সবারে আপন করিয়া নিজ নিজ রুটে টানিয়া লয়। আর যাহাদের ইহার ত্বরে দূর্বলতা থাকিয়া থাকে তাহাদিগের তো কথাই নাই।

ব্যস্‌, হয়ে গেল। স্বল্পক্ষম মানব আমি, ‘আমাদিগেরআর কি কথাই বা থাকবে। ইহাই তো ইহার বৈশিষ্ট্য। আপ্তবাক্য শুনে ভীষণরকম ঘেমে গেলুম। অনেকটা সেই প্যালারামের বাঘের গর্তে পড়ার পরের দশাটুকুর মতো। গর্তের মধ্যে আমি, বাঘ, শজারু আর দাদাআআআ। আমি শজারুকে আত্মহনন করছি, শজারু বাঘকে, বাঘ দাদাআআআ কেপ্রত্যকেই নিজেদের রুটে একে অন্যকে টানছি। আয় আয়, বেলেঘাটা ডায়মন্ডহারবার রানাঘাট তিব্বত। কিন্তু কেউ আসছে না। আসবে কি করে, সকলেই তো যূপকাষ্ঠে রয়েছে, মায় শজারুটা অবধি। শিহরিত হয়ে ভাবছি বৃথাই এ জীবন, মিথ্যেই এ স্তোকবাক্য, কি আর হবে, যাই গিয়ে এগরোল খাই। অমনি দাদাআআআ-র সাবধানবাণী,

যাহারা অত্যন্ত বেশী খাইয়া থাকে, তাহাদিগকে উদর পূর্ত করিয়া খাওয়াইলেও যেমন তাহাদিগের মনঃপুত হয়না, নিন্দুকদিগের পশ্চাদে অতি কঠিন কৃচ্ছসাধন করিয়া থাকিলেও নিন্দা ও ভর্তসনা শুনিতে হয়, তেমনই ইহার প্রতি যতই উৎসর্গ করিয়া থাকিলেও অন্তঃদিন পর্যন্ত ইহা চাহিয়া থাকিবে।

ভেঙে পড়লুম। হতভাগা পেট! ক্রমাগত পেটের দিকে চাহিয়া বসিয়া থাকাই সার। খালি খাও খাও, দাও দাও। ভর্তসনা শুনে সোনা মুখে বগল বাজাও। বঙ্কিমচন্দ্র এজন্যই বলেছিলেন, ‘আহার নিদ্রা ও মৈথুন। এ চলতে পারে না। পলিটব্যুরো নাকি? গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা থেকে বেরোতে হবে। কিন্তু গুরু কই? সাধন কি প্রকারে?

বন্ধুরা ও শুভানুধ্যায়ীরা এসে পরামর্শ দিল, ‘তুমি বরং একবার দাদাআআআর সাথে দেখা করো।

নক্সী কাঁথা মন - ৪


প্রথমে একটি কবিতা। কবিতার নামঘুর্নিপাক। হ্যাঁ, ভাষা ও বানান অপরিবর্তিত রেখেই আপনাদের তা শোনাচ্ছি। প্রথম অনুচ্ছেদটি শ্রবণ করুন,

গ্রহরা ঘোরে,সূর্যের চারিধারে।
পৃথিবী ঘোরে,সর্যকে কেন্দ্র করে।
চন্দ্র ঘোরে,পৃথিবীকে কেন্দ্র করে।

এই অবধি শুনে নিশ্চয়ই ভাবছেন, এ নিছক সৌরজগতের কবিতা নয়।দাদাআআআ’-র মহিমা অনুযায়ী এই কবিতার মাধ্যমে উনি হয়তো জীবনের একঘেয়েমির এন্টিক্লকওয়াইজ আবর্তনকে বোঝাতে চেয়েছেন। কি নিদারুণ একঘেয়েমি। তাই তো সেকেন্ডটাইম সূর্য বানানে দীর্ঘ ঊ নেই। ওটা এই একঘেয়েমির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। বস্তুতঃ সে হিসেবে এটি আসলে পাশ্চাত্যের ভিক্টোরিয়ান যুগের সংস্কারের বিরুদ্ধে সুপষ্ট ক্লকওয়াইজ হ্রেষারব। আম্মো এই ভেবেছিলুম। কিন্তু ফোর্থ লাইনে একটি পাঞ্চ রয়েছে।

গরুরা ঘোরে,তাদের বোকামির তরে।

ব্যস্‌, ঘেঁটে গেলুম। কাকে বলছে রে বাবা? বন্ধুরা উপদেশ দিল, হে কৌন্তেয়, প্রথম চারলাইনেই কবিতার মূল ভাব ফুটিয়ে তুলতে হবে এ কেমন মৌলবাদ। রথে চড়, আগে বাড়। তাই ত্রস্ত অবস্থা চট করে কাটিয়ে উঠে বাকিটুকুর দিকে চোখ রাখলুম

বিজ্ঞানীরা ঘোরে, মহাকাশকে কেন্দ্র করে
ভগবান গণেশ ঘোরে, তার দাদার তরে।
সৈনিকেরা ঘোরে, যুদ্ধের তরে।
ক্যাসেট ঘোরে,মানুষকে খুশি করার তরে।

হুঁ হুঁ কেমন বুঝছেন? প্রথম তিনটি উপমা দেখুন। কি নিদারুণ প্রাণময় বাস্তব, যেখানে পুরাণ ও আধুনিকতা একসাথে মিশছে। হালার মানবসমাজ এই সকরুণ ঘোরাঘুরি, কেমন জড়বস্তুর মধ্যেও ছড়িয়ে দিয়েছে। ক্যাসেটকে পর্যন্ত মানুষের অন্তহীন এন্টারটেনমেন্টের জন্য ঘুরতে হয়। চোখে জল চলে আসে মশাই। ভাবুন, সামান্য ক্যাসেটকে পর্যন্ত লোভী মানুষেরা

চোরেরা ঘোরে,চুরি করার তরে।
পুলিশেরা ঘোরে, চোরেদের ধরার তরে।

এ একদমই সত্য কথা। খাদ নেই। কবিরা সত্যদ্রষ্টা। যা দেখছেন, তাই লিখতে হবে। মনে করে দেখুন, ‘আমাদের ছোট নদী, চলে আঁকেবাঁকে, বৈশাখ মাসে সেথা হাঁটুজল থাকে।সুতরাং হাঁটুজল থাকলে তাই লিখতে হবে। এই প্যাটার্নটা হল, কবিতার মাঝে সামান্য গ্যাপ দিয়ে জিরিয়ে নেওয়ার জন্য। কবির কল্পনায় ভর দিয়ে উড়তে গিয়ে যাতে গোঁৎ না খেয়ে যান, সেজন্য। মনে সশ্রদ্ধ ভাব এল। এইরকম এত সুন্দর করে এক্সপেরিমেন্ট! এছাড়া এ কবিতার বাকিটুকু নেহাতই রিমেমব্রেন্স অভ্‌ কারেন্ট সিস্টেম, যথা

শিক্ষকেরা ঘোরে,শিক্ষা দেওয়ার তরে।

মনে প্রশ্ন জাগল? ছাত্রেরা তাহলে কি করে? সহজ উত্তর

ছাত্রেরা ঘোরে,শিক্ষা নেওয়ার তরে।

এমন আরো আছে। যথা
বাপেরা ঘোরে,ছেলেমেয়েদের তরে।

আরো একটি সাংঘাতিক উপমা। স্রেফ লিটারেল মিনিং ধরলে চলবে না। বাপ মানে কি? স্রেফ অন্নদাতা? বিগার সেন্সে ধরুন। গোটা পৃথিবীই তো একাধারে আমাদের বাপ মা। আমরা তো তারই সন্তান। ধরিত্রীপুত্র। কারেন্ট কন্টেক্সটে টোটাল মা মাটি মানুষ। তো, সে না ঘুরলে আমরা সব শালা ছিটকে মহাকাশে গিয়ে তুশ্চু। তো, আমাদের তরে সে ঘুরছে আর আমরা দিব্যি ভাবছি যে ঘুরছে না, এ হলো মানুষের চিরকালীন লোকালি ডিফিওমর্ফিক শ্রেনীচেতনা ওরফে স্বার্থপরতার গল্প। ব্যাপারটা ডিকেন্স পড়লে আরো বেশী করে বোঝা যাবে। সহজে বোঝানো যাবে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে ছেলেমেয়েদের উপর আলোকপাতটি কোথায়? তাও আছে

ছেলেমেয়েরা ঘোরে,তাদের প্রেমিকপ্রেমিকার তরে।

ব্যাখ্যা নিস্প্রয়োজন। তবু জানতে চাইলে ঝোপে ঝাড়ে খোঁজ করুন।

এ কবিতায় আরো কিছু ছিল, সেগুলো মেটামরফোসিস ওফ সামথিং এলস। আমি সামলাতে পারিনি। ধপাস করে পড়ে গেছিলাম। আমার মন্ত্রীপারিষদদের অবস্থাও তদ্রুপ। এমনকি ঘরের ইলেকট্রিকের ল্যাম্পটিও পারেনি। অনতিবিলম্বে আঁধার নামিয়াছিল।

নক্সী কাঁথা মন - ৩


আঃ, গপ্পো বলার সময় হুড়ো দিতে হয় না। রসিয়ে রসিয়ে পাঁপড়ভাজা সমেতযাক গে্‌ সে আর পাবো কোথায়, তা তাপ্পর কি হোলো শুনুন। নির্দিষ্ট সময়ে নোটিস লটকানো হল। বয়ান কিছুটা এইরূপ, হে পান্থশালার ভাইবোনেরা, তোমরা গল্প কবিতা নাটক রম্যরচনা ছড়া কবিতা নাচ গান আঁকা জোকা যা খুশি আমাদের পাঠিয়ে উদ্ধার করো। খালি খিস্তি খেউড় বাদ। আমরা সেই সুরম্য কদলীসমূহ ম্যাগাজিনে গ্রন্থিত করে নিদারুণ আনন্দ বিতরণ করি।
অবশ্যই আমাদের শ্রেনীসচেতনতা আছে। যাঁরা স্মিতশুভ্র গুরুদেব, বুর্জোয়া ইন্টেলেকচুয়াল আপেলে সর্বদা নিমজ্জিত, তাঁদের করজোড়ে বলা হল, ভো অজ্জউত্ত, মেল দ্বারা নিমন্ত্রণের ত্রুটি মার্জ্জনীয়। স্বগুণে ক্ষমা ঘেন্না করে দিন এবং স্ব স্ব লেখনীগুণে আমাদের ঐশ্বর্যমন্ডিত করুন। যাঁরা সামান্য তরুণ প্রলেতারিয়েত, সবে পাকছেন, তাঁদের বলা হল, শোনো ভাই, যদি গুটিকতক নারী পটাতে চাও তো শিগগির কিছু কবিতা জমা দাও। খবরদার, অন্য কিছু জমা দেওয়ার চেষ্টা করবে না। আর যেগুলো ঐ তিনের বার, মানে লুম্পেন প্রলেতারিয়েত, তাদের জন্য ছড়া ইত্যাদির স্ট্রং ফরমায়েশ জাহির করা হল। এবং এই সমস্ত কর্মকান্ড শেষে আমরা নিশ্চিন্ত মনে গাঢাকা দিলুম।

দেখতে দেখতে মাসাধিককাল অতিবাহিত। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল যে কেউই কিচ্ছুটি জমা দেয় নি। মায় কোন ট্যাঁফো অবধি নেই। অন্যান্যবার এমনসময় শোনা যায় অমুক হোস্টেলে আরেকটি মেঘনাদবধ কাব্য রচিত হচ্ছে, কি তমুক হোস্টেলেসাবঅল্টার্ন সিনেমা, গোদার ও বেখাপ্পা ক্যামেরা আন্দোলনজাতীয় থিসিস জন্ম নিচ্ছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এবার সব চুপচাপ। একেবারে নিবাত নিশ্চুপ নেই মামা ভাব। সকলে চিন্তিত হয়ে পড়লাম। হলো কি এদের?

এই ফাঁকে বলে নিই, প্রত্যেক রাজার যেমন একটি অমাত্য পরিষদ থাকে, আমারও তেমন ছিল। এবং এই অমাত্য পরিষদরা যেমন বিক্রমাদিত্যের আমল থেকেই রাজকার্য সম্পন্ন করে এসেছে, এখানেও তার ব্যাত্যয় হচ্ছিল না। কিন্তু তারাও এবার ফাঁপরে পড়ে গেল। মনে মনে অবশ্য সকলেই আশা করে আছে যে সেনসেক্স আবার ঘুরবে। হাজার হোক, বঙ বলে কথা। চাট্টি গপ্পো কবিতা পাওয়া যাবে না! ছোঃ।
কিন্তু ঐ আশাটাই সার। তারিখ পেরিয়ে গেল, কিস্যুটি পাওয়া গেল না। তারিখ এক্সটেন্ড করা হল, ক্যাম্পেন চালানো হল, মায় ঘুষ অবধি দেওয়া হতে লাগল, তবু কিস্যু নেই। সন্দেহ হল, দেবী কি হাঁসের পরিচর্যা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত? কারোর ওপর ভর করছেন না যে বড়! নাকি এ এক সর্বব্যাপী চক্রান্ত! কার পাকা ধানে মই দিলুম রে বাবা। যাইহোক, নানাপ্রকার কন্সপিরেসি থিয়োরীতে যখন ভগবান দশচক্রে ভূত হইতেছেন তখন পেয়াদা আসিয়ে ঘোষণা করিল, ‘হারাধনের একটি ছেলেরে পাওয়া গিসে।সক্কলে হামলে পড়লাম।
পেয়াদার হাতে একটি ব্রাউন প্যাকেট। স্থূলকায়, স্ফিতোদর। প্যাকেট টি পাঠিয়েছেন কে? কে আবার, আমাদের মহামহিম দাদাআআআ। ম্যাগাজিনকে বাস্পীভূত হওয়ার দশা থেকে বাঁচাতে উনি নিজেই ওঁর রচনাবলী পাঠিয়ে দিয়েছেন। সঙ্গে অনুরোধ, সবকটি লেখা ছাপালেই ভালো হয় তবে আমরা যদি সৌজন্যতা বশতঃ কিছু বাদও দিই, তাহলেও উনি অখুশি হবেন না। এঁর মধ্যে কিছু লেখা আবার স্বর্ণপদকজয়ী। তো, সেই গুণীশ্রেষ্টদের উপস্থিতি উনি একান্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন। রিগার্ডস...ইত্যাদি। পেয়াদা প্রস্থান করিল।
দিনটা এখনো মনে আছে। নোংরারকম বৃষ্টি হচ্ছে। প্রায়ান্ধকার ঘরে আমরা গুটিপাঁচেক বসে এ ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছি। সামনে জলজ্যান্ত বারুদ। কেউই নেড়েচেড়ে দেখার সাহস পাচ্ছি না। শেষে আর থাকতে না পেরে বাতি জ্বালিয়ে প্যাকেট উন্মোচন করলুম। একতাড়া ফুলস্কেপ কাগজ বার হল।

নক্সী কাঁথা মন - ২


হ্যাঁ যা বলছিলাম, গপ্পোর কথা। তা এই প্রথম গপ্পোটি একটি কৃষ্ণবর্ণ প্রাণীকে নিয়ে। আমাদের বিজ্ঞান সংস্থানের রাস্তায় চরে বেড়াতে দেখা যায়। এঁর প্রায় বৃষস্কন্ধ দেহ, নিমীলিত চোখ, তেলচুকচুকে গাত্র যেন মাছিও পিছলে যায়, অমাবস্যার রাত্রে ইনি সন্তর্পণে চলাফেরা করেন, সর্বোপরি পদক্ষেপণের মধ্যে রাজকীয় ভাবমূর্তি বিলক্ষণ বর্তমান। না না মোষটোষ নয়, ইনি মনুষ্যই বটে। বঙ্গীয় কোলাহল হতে মুক্ত হয়ে এইস্থলে এসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, গীতিকাব্য, কাব্যনাট্য, সঙ্গীত, গণসঙ্গীত, মুজরা, দোপাট্টা, পেঁয়াজি ইত্যাদি হরেক বিষয়ে ইনি যাকে বলে রীতিমতো সুপন্ডিত। পোস্ট ইম্পিরিয়াল কবিতা থেকে শুরু করে শেক্সপীয়রের লেখায় সমকামিতার প্রভাব, খাটাপায়খানা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ কি বলেছেন, আলবেয়ার কামু ও চার্বাক দর্শন, গদ্যের কন্সট্রাকশন ও ডিকন্সট্রাকশন ইত্যাদি নিয়ে যদি আপনার মনে বিবিধ চিন্তার উদ্রেক হয় তবে সংকোচ না করে ছুটে যান ওঁর কাছে। ওঁর এই বিবিধ ক্ষমতাহেতু বাঙালী অবাঙালী নির্বিশেষে ইনি এখানকার সকলের পরিতাপহন্তারকদাদা। যা তা রকম ভাবে দাদা উচ্চারণ করলে হবে না। শেষদিকে একটু ক্লাসিকাল টান দিতেই হবে, অর্থাৎ দাদাআআআ। নইলে দেখবেন আলটপকা ভাবে উচ্চারিত হলে নিকোনো উঠোন জুড়ে খালি চোনা এসে পড়ছে।
দাদাআআআর মহিমা অপার। ঐসব কল্লোল কৃত্তিবাস সন্দীপন কমলকুমার এঁর কাছে তুশ্চু। ওঁরা ভেঙে গেছেন, দাদাআআআ গড়েন। ওঁদেরটা ডিফারেন্সিয়েশন, দাদাআআআ দস্তুর মতো ইন্টিগ্রেশন করেন। ওঁরা আনালিসিস করেছেন, দাদাআআর কাছে পাবেন সিন্থেসিস। পাবলো নেরুদার সাথে ২% জীবনানন্দ মিশিয়ে হালকা রবীন্দ্রনাথ ফ্লেভার দিলে কি জিনিস হয় দেখেছেন কখনো? জানতে হলে ওঁর সাথে মিশতে হবে। হুঁ হুঁ, দস্তুর মতো কেমিস্ট্রী ল্যাবে দাদাআআআ টেস্টটিউবে কবিতা বানান। লিটমাস লাল হলো তো রবীন্দ্রনাথের তলায় ঢেঁড়া মারেন, লিটমাস নীল হলো তো জীবনানন্দকে কেটে দিলেন, টেস্টটিউব ফেটে গেলে সেযাত্রায় শক্তি কে প্রায় পেয়েই গেছেন ভেবে আত্মহারা হন আর কিছুই না হলে ও জিনিস বিদেশী বলে চালিয়ে দেন। দোর্দন্ডপ্রতাপ ভারত সরকার অবধি এঁর ভীষণ গুণমুগ্ধ ভক্ত, তাই সন্মানের সঙ্গে পুষছেন যদিও আড়ালে লোকে কুৎসা করে থাকে। কিন্তু সেতো ভেতো বাঙালীর খুজলি মনের নমুনা মাত্র।
তো এহেন মহাপ্রাণের সাথে একবার অধমের মোলাকাত হয়েছিল। সেই কথা এবার খোলসা করে বলা যাক।
গত বছরের শুরুতেই নিধিরাম টাইপ কেউ একজন এসে আমায় ধরল, ‘আর তো পারি না বাওয়া, এবার তোমাকে ম্যাগাজিনের এডিটর হতেই হবে।আমি বল্লুম, ‘তা আমায় কেন, দাদাআআআ রে গিয়া ধর।সে বিষম মাথা নেড়ে বলল, ‘উঁহু উনি মেন প্লেয়ার, কোচ হতে চান না। আমরা একটি নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন কাম কোচ কাম মূর্খ খুঁজে বেড়াচ্ছি। তোমার পালোয়ানের মত চেহারা, তুমিই সামলাতে পারবে।বললে বিশ্বেস করবেন না, হঠাৎ কেমন প্যালারামের মতো চিন্তাভাবনা মনে এল। জন্ম ইস্তক আমারে কেউফাস্টেব্যাটিং করতে পাঠায়নি, চিরকাল লাস্টের দিকে রোল নাম্বার ছিল, জ্ঞান হওয়া মাত্র আরেকবার সাধিলেই খাইববলে এলুম, সেই আমাকেই কিনা হঠাৎ করে সাধাসাধি! আর পায় কে, দিলুম ঘাড়টি নেড়ে, আর পত্রপাঠ কে যেন হ্যান্ডবিলে নামধাম ছাপিয়ে সেসব ঘোষনা করে দিল। আমি ভাবলুম, কি আর হবে, আনন্দে থাকিব মস্তি করিব, মৎস্য ধরিব খাইব সুখে। শুভানুধ্যায়ীরাও উৎসাহ দিল, ‘এমন কি আর ব্যাপার! বড়জোর দশটা বানান ভুল আর পাঁচটা দাঁড়ি কমা কম থাকবে।সঙ্গে চেতাবনী, ‘কাগজপত্র গুলো শুধু যত্ন করে রেখ, তোমার যা ভুলো মন!তখন কি আর জানতাম, অধমকে লুটে দেওয়ার জন্য দেবী ঢাল তলোয়ার নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছেন!

নক্সী কাঁথা মন - ১


এতো জানা কথাই যে, শরতকালে বড্ড ভালো রকম কাশফুল ফোটে। আকাশে ফুলকো ফুলকো মেঘ দেখে ডাকাবুকো গিন্নীরা কত্তাদের কাছে রাতারাতি আবদেরে বনে যান। বৈঠকখানা বাজারে পাল্লা দিয়ে আলু পটল ওঠানামা করে। বারান্দার রোঁদে লেপকাঁথা শুকোতে দিয়ে বুড়োবুড়ির দলের সেকি গুজুর গুজুর! প্রেমিকারা এসময় তাদের প্রেমিকদের মিন্টুসোনা বলে ডাকে। মামলেট, রেলওয়েজের টিকিট, রেডবুক কিছু বেশী বিক্রি হয় আর ছেলেপুলেরা চাঁদার বিলবই হাতে এবাড়ি ওবাড়ি হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে। সেকালে আওরঙজেব এসময় দিগ্বিজয়ে বের হতেন।
এই পর্যন্ত পরশুরামের সাথে বেশ মিল আছে। তবে এযাত্রায় নকুড়মামার সাথে দেখা হওয়ার জো নেই। কচি সংসদের কোন চরিত্তির ও নেই। এ স্রেফ কচি মনে ধুমধাড়াক্কা, এলোপাথাড়ি হাতুড়ীপেটনের বিবরণ। পড়তে একঘেয়ে লাগলে গুস্তাকি মাফ করবেন।
কিন্তু শরতকালের প্রসঙ্গ কেন? আসলে আমার শরতকালে সক্কলকে দেখে নেওয়ার ইচ্ছেটা বেশ চাগিয়ে ওঠে। গরমকালে যেমন ধরুন দেদার ঘেমেনেয়ে একেবারে নেস্তনাবুদ। নিজেকে সময়-সময় রাক্ষসতাল হ্রদ পর্যন্ত বলে মনে হয়। ঐ টানা গরম সামলানো কি চাট্টিখানি কথা রে বাপ! তারপর ধরুন বর্ষাকালে তো সারাদিন নাকে রুমাল ঠেকিয়ে বসে থাকি। দুটো রসের কথা ভাবব কি, যা ঝাপুর ঝুপুর বৃষ্টি! আর শীতকাল মানে তো নিতান্ত জবুথবু ব্যাপার। বালাপোষ কম্বল সোয়েটার মাফলার টুপি দস্তানা মোজা ইত্যাদি সামলে লোকচিন্তা করা আমার কম্মো নয়। বসন্তকালে আবার সময় সময় এত প্রেম পায় যে রজ্জুতে সর্পভ্রমঃ না সর্পতে রজ্জুভ্রমঃ সেটাই গুলিয়ে যায়। তাই পৃথিবীর হালহকিকত ইত্যাদি নিয়ে গূঢ় চিন্তা করতে গেলে শরতকালই ভালো। দিব্যি মলয় সমীরণ পাচ্ছেন, রান্নাঘরে দুষ্টুমিষ্টি গন্ধ শুঁকছেন, রাত্রিবেলা গিন্নির ঝাঁঝাঁলো বাক্যি শুনেও আমল দিচ্ছেন না, খাচ্ছেন দাচ্ছেন, ভুঁড়ির পরিধি বাড়ছে, ট্রেনের টাইম টেবিল নিয়ে লোফালুফি খেলছেন, আড্ডার ঠেকে গিয়ে মুচকি হেসে শুধোচ্ছেন, ‘আছে নাকি?’ আর বার বার দেওয়ালে মাথা ঠুকছেন, ‘আপিসের বড়বাবুকে ওলাউঠোয় নাও মা, ওলাউঠোয় নাও।
তা এ হেন সদ্‌চিন্তা যার তার কম্মো নয়। পরহিতায় পরচিন্তা করা খানদানি আর্ট। বৃহৎ কিন্তু কুটীর শিল্প। এবং দেবভোগ্যও বটে। গা চিড়বিড় করলে, বিড়বিড় করে জনসাধারণকে খিস্তি দেওন, মনে একপ্রকার সূক্ষ্ম অনুভূতির জন্ম দেয়। গুণী মাত্রেই সেরসের কদর বুঝবেন। ব্যক্তির প্রকারভেদে এই রসও নানাপ্রকার। বিচিত্র ধরণের। আমি অবশ্য একটু কড়াপাক পছন্দ করি, তাই ২০% পরচর্চার সাথে ৩০% ফিলসফি মিশিয়ে নিই। পরিমাণমত ৬% কালিলেপন করে ৩৯% জল মেশাই। ওতে হজমটা ভালো হয়। শেষে একটু হালকা করে ৫% খিস্তিবাটা ছড়িয়ে দিই। এতে একটু টেস্টটা বাড়ে। শেষে গরমাগরম আঁচ থেকে নামিয়ে একটু বিড়ি সমেত পরিবেশন করি। হাসবেন না, রেফারেন্স চাইলে শিব্রামের বই দেখুন।
যাক গে, এবার একটু ফুরসত ফেলি। এক্ষণে নিজের পরিচয় দেওয়াটাও একটু আবশ্যক বলে মনে হচ্ছে। তাহলে ব্যাপারটা আরো খোলতাই হবে। আসলে আমি একজন ছাত্র। অধম যদিও হোমোস্যাপিয়েন্স কিন্তু আমার লেজ আছে, কারণ আমি গবেষণা করি। সে লেজের ডগাটা আবার একটু লাল। কেন না, আমি ভা-র-তী-য় বি-জ্ঞা-ন সং-স্থা-নের ছাত্র। শুনেই কেমন পঞ্চায়েত প্রকল্প বা ইন্দিরা বিকাশ যোজনা মনে হচ্ছে, তাই না? না না, ওসব কিছু নয়, মায় শরবতও নয়, এটি আসলে দস্তুর মতো একটি মুদিখানা, যেখানে কেবল ছোলা পাওয়া যায়। আর আসমুদ্রহিমাচল থেকে ঝেঁটিয়ে আসা উন্নততর হাঁউমাঁউখাঁউ-এর দল দাঁড়ে বসে সেই ছোলা খায় আর ডাকে। শক, হূণ, মোগল, পাঠান ও অপোগন্ডের দল এখানে একই দেহে বিলীন। প্রত্যেকেই স্ব স্ব ভূত-ভবিষ্যত ভুলিয়া পরস্পর খামচাখামচি করিয়া কালাতিপাত করিয়া থাকেন।
ভাষা দেখে নাক সিঁটকোনো চলবে না। গুরুচন্ডালী দোষ মাফ করতে হবে। মনের কথা লিখতে বসে ওইসব নিয়ে ভাবলে হবে না। তাছাড়া একেবারে প্রাণের ভিতর দিয়ে মরমে প্রবেশ করাতে চাইলে রিমিক্স ছাড়া কি আর গতি আছে?
যাক গে, কনটেক্সট ভুলে যাচ্ছি মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, এ হ্ল যাকে বলে নিন্দাপ্রস্তাব স্ল্যাশ পরচর্চা স্ল্যাশ সারাদিন তুমি কী করিলে জাতীয় ব্যাপার। এতদিন মহাফেজখানায় সুরক্ষিত ছিল। কিন্তু বউ বাপের বাড়ি পালিয়েছে, তাই আর সামলাতে পারছি না। মনের ভেতর সব কেমন উপচে উপচে আসছে। নন্দীভৃঙ্গী সমেত গাঁজা খেয়ে উমা বিরহে কাতর হয়ে ঘুরে বেড়াবার দিন শেষ, আনন্দবাজার মোরে সাবালক করেছে। এখন শেক দ্য বট্‌ল এর যুগ। তাই, আয় ভাই সব উগরে দিই। খালি ডিসক্লেমার হিসেবে বলব, ‘সব কিছুর শেষে কিন্তু প্রতিবার আমি সাধু সাজিব, দোষ সব উহারা লইবে।
আসলে এই বিচিত্র পরিমন্ডলে ততোধিক চিত্রবিচিত্র যে ঘটনার ঘনঘটা লুকিয়ে থাকে তার তুল্য সাহিত্যরস আর কোথাও পাওয়া মুশকিল। শুধু একটু নিয়মিত চর্চা করতে হয় এই যা, নইলে দরকচা মেরে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, একেবারেমৌ-কা-সা-বি-সমানে আদি অকৃত্রিম সেই ঘনশ্যাম দাসের চেলাচামুন্ডা কথিত মৌলিক কাহিনী সার বিপনণ সংস্থাটাই খুলে ফেলি, পসার কিছু কম হবে না। বঙ্গজ লেখকগণ এমনিতেই মা মনসা, তারপর ধুনোর গন্ধ পেলে আর রক্ষে নেই। হরে দরে থরেথরে লেখা ঝরে পড়বে।
ভণিতা অনেক হোলো। পাবলিক কেটে পড়ার আগে প্রথম গপ্পো শুরু করা যাক।

Monday, 12 September 2011

দায়িত্বশীলের প্রতি সুখটান


একবার হোপলেস হয়ে দেখতে পারিস,

এ কিন্তু দেশলাই হওয়া নয়,
একপিঠ আঁধার ঘাড়ে করে
জ্বলে ওঠার পর 
প্রাপ্য বলতে শুধু
জমাট অনাদর

বা,

পেনসিলবক্স হওয়াও নয়,
খোলা ও বন্ধের
সাদাকালো ঘর
জুড়ে, কখনও আঁচড় কাটে দাগ
বুকের ভিতর
আনকনশাস’,
বাংলায় অগোচর

এ শুধু,

পালক কুড়োনোর মরসুমে
মোম সমেত চুড়োর দিকে হাঁটা,
এগিয়ে, পিছিয়ে, চারিদিক জুড়ে
হয়তো হাসি পাবে তোর,

তবু

প্রতিটি গ্র্যাভিটি শূন্য লাফ দেওয়ার আগে
জেনে রাখিস,
পড়ন্ত হাওয়ার দেহে
একই সাথে ঝাঁপ দেয়
বিস্তীর্ণ ডানার ইকেরাস
ঈশ্বর

Tuesday, 6 September 2011

বদল


প্রতিবারই ফেরার সময় দেখি
কিছু না কিছু বদল,
ঝাউডিহি, চন্ডীপুর, ঝিটকিনি
আরো পরে, দুকিলোমিটার দূরে
লালমাটি চায়ের দোকানে
'বাস্টপে'র আদল,
আমাদের গ্রাম
ব্লক ২
নাড়াশোল।

নয়ানজুলি পেরিয়ে সরু আলপথ ধরে হাঁটি
হেঁতু ধান রোয়া, ‘মন্মথকা’র ক্ষেতে
কাস্তে হাতুড়ি গুনি, যেখানে চষছে মাটি মুনিষ সবুজ
বাঁশঝুরি মাঠ শেষে মাটিঘর খড়চাল ঘর ছাওয়া চুড়ো গম্বুজ
নিভৃতে দেখে ফেলি এবারে টিনের চাল
এবারে ব্লাউজ।

চি অ অ অ সুরে কোনো পাখি ডাকে
চারপাই খাটিয়া সমেত
সন্ধ্যার hyaহ্যারিকেনে,
উজ্জ্বল
সোমত্ত যুবতী গড়ে শীতলামঙ্গল,
সেসবে অভ্যস্ত
লালঝুঁটি মোরগের অ্যালার্ম ভুলে
মহাদেব, সেজকাকি, শ্রীনিবাস দুলে
খুঁজে বেড়ায়
হ্যান্ডবিল নির্দেশিত কিছু  হাড়
রাত্রির খুরে, সেই হেতু দশদিক জুড়ে
আমি দেখি ওপিঠের চাঁদছোঁয়া
একপেশে অন্ধকার

প্রতিবারই ফেরার সময় দেখি
কিছু না কিছু বদল,
অথবা আমিই হয়তো বদলে যাই প্রতিবার।

Sunday, 4 September 2011

অপাঙক্তেয়

‘আপনি এত ভাল লেখেন কী করে?’

প্রশ্নটা হয়তো বা বোকার মতোন ছিল,

পাঁচটা পনেরোর রোমান্টিসিজম জমানো ক্যাফে
মৃদু হেসে ধরিয়েছিল সিগারেট,
রুক্ষ টিবি ধরা গলাটা
ধীরে ধীরে শুনিয়েছিল, সেইসব
আমঝুড়ি জংলার হাতি, খাল-মুহে নোনাজলে পবিত্র বিবির চর,
নৌকাছইয়ে যত কাঠবুটিয়া পাখিদের ভীড়,
তারপর অনেকটা আপ্তবাক্যের মতো
সান্দ্রস্বরে বলেছিল,
শৈশব
সেই থেকে আমি শৈশব খুঁজে ফিরি
শৈশব না গ্রাম,
গ্রাম না শৈশব

জঙ্গল ধরে ধরে গ্রামের ভিতর গ্রাম খুঁজে যাই,
শিকড়হীন ল্যাম্পপোস্ট থেকে কংসাবতী বাদুড়ীমাঠের ঘাসে
গিরিমাটি মোরগলড়াই দিন শেষে,
বহিরাগত চোখে দেখি সরপুঁটি মাছদের ভীড়
বানভাসি মৃত বৌ পরিবার সমেত শোনে রাতভোর টুসু গান
অথবা
দোরগোড়ার রোদে পুড়ে দেখি,
কুমোরের কর্দমাক্ত আঙুলে ঘোরাফেরা করে মৃত্তিকা বর্ণের ঢেউ
হঠাতই মাটির ঘোড়ার দলে ছুটে চলা কেউ
চাঁদবিলে পড়ন্ত বিকেলে হেঁকে বলে যা ভাগ্‌

আমিও যেন এরই অপেক্ষায় থাকি
প্রতিবার খোলস ছুঁড়ে নিঃশব্দে বদলে নিই
পাঁচটা পনেরোর রোমান্টিসিজম
ও রাগ ।।