Friday, 23 September 2011

নক্সী কাঁথা মন - ১


এতো জানা কথাই যে, শরতকালে বড্ড ভালো রকম কাশফুল ফোটে। আকাশে ফুলকো ফুলকো মেঘ দেখে ডাকাবুকো গিন্নীরা কত্তাদের কাছে রাতারাতি আবদেরে বনে যান। বৈঠকখানা বাজারে পাল্লা দিয়ে আলু পটল ওঠানামা করে। বারান্দার রোঁদে লেপকাঁথা শুকোতে দিয়ে বুড়োবুড়ির দলের সেকি গুজুর গুজুর! প্রেমিকারা এসময় তাদের প্রেমিকদের মিন্টুসোনা বলে ডাকে। মামলেট, রেলওয়েজের টিকিট, রেডবুক কিছু বেশী বিক্রি হয় আর ছেলেপুলেরা চাঁদার বিলবই হাতে এবাড়ি ওবাড়ি হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে। সেকালে আওরঙজেব এসময় দিগ্বিজয়ে বের হতেন।
এই পর্যন্ত পরশুরামের সাথে বেশ মিল আছে। তবে এযাত্রায় নকুড়মামার সাথে দেখা হওয়ার জো নেই। কচি সংসদের কোন চরিত্তির ও নেই। এ স্রেফ কচি মনে ধুমধাড়াক্কা, এলোপাথাড়ি হাতুড়ীপেটনের বিবরণ। পড়তে একঘেয়ে লাগলে গুস্তাকি মাফ করবেন।
কিন্তু শরতকালের প্রসঙ্গ কেন? আসলে আমার শরতকালে সক্কলকে দেখে নেওয়ার ইচ্ছেটা বেশ চাগিয়ে ওঠে। গরমকালে যেমন ধরুন দেদার ঘেমেনেয়ে একেবারে নেস্তনাবুদ। নিজেকে সময়-সময় রাক্ষসতাল হ্রদ পর্যন্ত বলে মনে হয়। ঐ টানা গরম সামলানো কি চাট্টিখানি কথা রে বাপ! তারপর ধরুন বর্ষাকালে তো সারাদিন নাকে রুমাল ঠেকিয়ে বসে থাকি। দুটো রসের কথা ভাবব কি, যা ঝাপুর ঝুপুর বৃষ্টি! আর শীতকাল মানে তো নিতান্ত জবুথবু ব্যাপার। বালাপোষ কম্বল সোয়েটার মাফলার টুপি দস্তানা মোজা ইত্যাদি সামলে লোকচিন্তা করা আমার কম্মো নয়। বসন্তকালে আবার সময় সময় এত প্রেম পায় যে রজ্জুতে সর্পভ্রমঃ না সর্পতে রজ্জুভ্রমঃ সেটাই গুলিয়ে যায়। তাই পৃথিবীর হালহকিকত ইত্যাদি নিয়ে গূঢ় চিন্তা করতে গেলে শরতকালই ভালো। দিব্যি মলয় সমীরণ পাচ্ছেন, রান্নাঘরে দুষ্টুমিষ্টি গন্ধ শুঁকছেন, রাত্রিবেলা গিন্নির ঝাঁঝাঁলো বাক্যি শুনেও আমল দিচ্ছেন না, খাচ্ছেন দাচ্ছেন, ভুঁড়ির পরিধি বাড়ছে, ট্রেনের টাইম টেবিল নিয়ে লোফালুফি খেলছেন, আড্ডার ঠেকে গিয়ে মুচকি হেসে শুধোচ্ছেন, ‘আছে নাকি?’ আর বার বার দেওয়ালে মাথা ঠুকছেন, ‘আপিসের বড়বাবুকে ওলাউঠোয় নাও মা, ওলাউঠোয় নাও।
তা এ হেন সদ্‌চিন্তা যার তার কম্মো নয়। পরহিতায় পরচিন্তা করা খানদানি আর্ট। বৃহৎ কিন্তু কুটীর শিল্প। এবং দেবভোগ্যও বটে। গা চিড়বিড় করলে, বিড়বিড় করে জনসাধারণকে খিস্তি দেওন, মনে একপ্রকার সূক্ষ্ম অনুভূতির জন্ম দেয়। গুণী মাত্রেই সেরসের কদর বুঝবেন। ব্যক্তির প্রকারভেদে এই রসও নানাপ্রকার। বিচিত্র ধরণের। আমি অবশ্য একটু কড়াপাক পছন্দ করি, তাই ২০% পরচর্চার সাথে ৩০% ফিলসফি মিশিয়ে নিই। পরিমাণমত ৬% কালিলেপন করে ৩৯% জল মেশাই। ওতে হজমটা ভালো হয়। শেষে একটু হালকা করে ৫% খিস্তিবাটা ছড়িয়ে দিই। এতে একটু টেস্টটা বাড়ে। শেষে গরমাগরম আঁচ থেকে নামিয়ে একটু বিড়ি সমেত পরিবেশন করি। হাসবেন না, রেফারেন্স চাইলে শিব্রামের বই দেখুন।
যাক গে, এবার একটু ফুরসত ফেলি। এক্ষণে নিজের পরিচয় দেওয়াটাও একটু আবশ্যক বলে মনে হচ্ছে। তাহলে ব্যাপারটা আরো খোলতাই হবে। আসলে আমি একজন ছাত্র। অধম যদিও হোমোস্যাপিয়েন্স কিন্তু আমার লেজ আছে, কারণ আমি গবেষণা করি। সে লেজের ডগাটা আবার একটু লাল। কেন না, আমি ভা-র-তী-য় বি-জ্ঞা-ন সং-স্থা-নের ছাত্র। শুনেই কেমন পঞ্চায়েত প্রকল্প বা ইন্দিরা বিকাশ যোজনা মনে হচ্ছে, তাই না? না না, ওসব কিছু নয়, মায় শরবতও নয়, এটি আসলে দস্তুর মতো একটি মুদিখানা, যেখানে কেবল ছোলা পাওয়া যায়। আর আসমুদ্রহিমাচল থেকে ঝেঁটিয়ে আসা উন্নততর হাঁউমাঁউখাঁউ-এর দল দাঁড়ে বসে সেই ছোলা খায় আর ডাকে। শক, হূণ, মোগল, পাঠান ও অপোগন্ডের দল এখানে একই দেহে বিলীন। প্রত্যেকেই স্ব স্ব ভূত-ভবিষ্যত ভুলিয়া পরস্পর খামচাখামচি করিয়া কালাতিপাত করিয়া থাকেন।
ভাষা দেখে নাক সিঁটকোনো চলবে না। গুরুচন্ডালী দোষ মাফ করতে হবে। মনের কথা লিখতে বসে ওইসব নিয়ে ভাবলে হবে না। তাছাড়া একেবারে প্রাণের ভিতর দিয়ে মরমে প্রবেশ করাতে চাইলে রিমিক্স ছাড়া কি আর গতি আছে?
যাক গে, কনটেক্সট ভুলে যাচ্ছি মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, এ হ্ল যাকে বলে নিন্দাপ্রস্তাব স্ল্যাশ পরচর্চা স্ল্যাশ সারাদিন তুমি কী করিলে জাতীয় ব্যাপার। এতদিন মহাফেজখানায় সুরক্ষিত ছিল। কিন্তু বউ বাপের বাড়ি পালিয়েছে, তাই আর সামলাতে পারছি না। মনের ভেতর সব কেমন উপচে উপচে আসছে। নন্দীভৃঙ্গী সমেত গাঁজা খেয়ে উমা বিরহে কাতর হয়ে ঘুরে বেড়াবার দিন শেষ, আনন্দবাজার মোরে সাবালক করেছে। এখন শেক দ্য বট্‌ল এর যুগ। তাই, আয় ভাই সব উগরে দিই। খালি ডিসক্লেমার হিসেবে বলব, ‘সব কিছুর শেষে কিন্তু প্রতিবার আমি সাধু সাজিব, দোষ সব উহারা লইবে।
আসলে এই বিচিত্র পরিমন্ডলে ততোধিক চিত্রবিচিত্র যে ঘটনার ঘনঘটা লুকিয়ে থাকে তার তুল্য সাহিত্যরস আর কোথাও পাওয়া মুশকিল। শুধু একটু নিয়মিত চর্চা করতে হয় এই যা, নইলে দরকচা মেরে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, একেবারেমৌ-কা-সা-বি-সমানে আদি অকৃত্রিম সেই ঘনশ্যাম দাসের চেলাচামুন্ডা কথিত মৌলিক কাহিনী সার বিপনণ সংস্থাটাই খুলে ফেলি, পসার কিছু কম হবে না। বঙ্গজ লেখকগণ এমনিতেই মা মনসা, তারপর ধুনোর গন্ধ পেলে আর রক্ষে নেই। হরে দরে থরেথরে লেখা ঝরে পড়বে।
ভণিতা অনেক হোলো। পাবলিক কেটে পড়ার আগে প্রথম গপ্পো শুরু করা যাক।

No comments:

Post a Comment