Friday, 23 September 2011

নক্সী কাঁথা মন - ৩


আঃ, গপ্পো বলার সময় হুড়ো দিতে হয় না। রসিয়ে রসিয়ে পাঁপড়ভাজা সমেতযাক গে্‌ সে আর পাবো কোথায়, তা তাপ্পর কি হোলো শুনুন। নির্দিষ্ট সময়ে নোটিস লটকানো হল। বয়ান কিছুটা এইরূপ, হে পান্থশালার ভাইবোনেরা, তোমরা গল্প কবিতা নাটক রম্যরচনা ছড়া কবিতা নাচ গান আঁকা জোকা যা খুশি আমাদের পাঠিয়ে উদ্ধার করো। খালি খিস্তি খেউড় বাদ। আমরা সেই সুরম্য কদলীসমূহ ম্যাগাজিনে গ্রন্থিত করে নিদারুণ আনন্দ বিতরণ করি।
অবশ্যই আমাদের শ্রেনীসচেতনতা আছে। যাঁরা স্মিতশুভ্র গুরুদেব, বুর্জোয়া ইন্টেলেকচুয়াল আপেলে সর্বদা নিমজ্জিত, তাঁদের করজোড়ে বলা হল, ভো অজ্জউত্ত, মেল দ্বারা নিমন্ত্রণের ত্রুটি মার্জ্জনীয়। স্বগুণে ক্ষমা ঘেন্না করে দিন এবং স্ব স্ব লেখনীগুণে আমাদের ঐশ্বর্যমন্ডিত করুন। যাঁরা সামান্য তরুণ প্রলেতারিয়েত, সবে পাকছেন, তাঁদের বলা হল, শোনো ভাই, যদি গুটিকতক নারী পটাতে চাও তো শিগগির কিছু কবিতা জমা দাও। খবরদার, অন্য কিছু জমা দেওয়ার চেষ্টা করবে না। আর যেগুলো ঐ তিনের বার, মানে লুম্পেন প্রলেতারিয়েত, তাদের জন্য ছড়া ইত্যাদির স্ট্রং ফরমায়েশ জাহির করা হল। এবং এই সমস্ত কর্মকান্ড শেষে আমরা নিশ্চিন্ত মনে গাঢাকা দিলুম।

দেখতে দেখতে মাসাধিককাল অতিবাহিত। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল যে কেউই কিচ্ছুটি জমা দেয় নি। মায় কোন ট্যাঁফো অবধি নেই। অন্যান্যবার এমনসময় শোনা যায় অমুক হোস্টেলে আরেকটি মেঘনাদবধ কাব্য রচিত হচ্ছে, কি তমুক হোস্টেলেসাবঅল্টার্ন সিনেমা, গোদার ও বেখাপ্পা ক্যামেরা আন্দোলনজাতীয় থিসিস জন্ম নিচ্ছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এবার সব চুপচাপ। একেবারে নিবাত নিশ্চুপ নেই মামা ভাব। সকলে চিন্তিত হয়ে পড়লাম। হলো কি এদের?

এই ফাঁকে বলে নিই, প্রত্যেক রাজার যেমন একটি অমাত্য পরিষদ থাকে, আমারও তেমন ছিল। এবং এই অমাত্য পরিষদরা যেমন বিক্রমাদিত্যের আমল থেকেই রাজকার্য সম্পন্ন করে এসেছে, এখানেও তার ব্যাত্যয় হচ্ছিল না। কিন্তু তারাও এবার ফাঁপরে পড়ে গেল। মনে মনে অবশ্য সকলেই আশা করে আছে যে সেনসেক্স আবার ঘুরবে। হাজার হোক, বঙ বলে কথা। চাট্টি গপ্পো কবিতা পাওয়া যাবে না! ছোঃ।
কিন্তু ঐ আশাটাই সার। তারিখ পেরিয়ে গেল, কিস্যুটি পাওয়া গেল না। তারিখ এক্সটেন্ড করা হল, ক্যাম্পেন চালানো হল, মায় ঘুষ অবধি দেওয়া হতে লাগল, তবু কিস্যু নেই। সন্দেহ হল, দেবী কি হাঁসের পরিচর্যা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত? কারোর ওপর ভর করছেন না যে বড়! নাকি এ এক সর্বব্যাপী চক্রান্ত! কার পাকা ধানে মই দিলুম রে বাবা। যাইহোক, নানাপ্রকার কন্সপিরেসি থিয়োরীতে যখন ভগবান দশচক্রে ভূত হইতেছেন তখন পেয়াদা আসিয়ে ঘোষণা করিল, ‘হারাধনের একটি ছেলেরে পাওয়া গিসে।সক্কলে হামলে পড়লাম।
পেয়াদার হাতে একটি ব্রাউন প্যাকেট। স্থূলকায়, স্ফিতোদর। প্যাকেট টি পাঠিয়েছেন কে? কে আবার, আমাদের মহামহিম দাদাআআআ। ম্যাগাজিনকে বাস্পীভূত হওয়ার দশা থেকে বাঁচাতে উনি নিজেই ওঁর রচনাবলী পাঠিয়ে দিয়েছেন। সঙ্গে অনুরোধ, সবকটি লেখা ছাপালেই ভালো হয় তবে আমরা যদি সৌজন্যতা বশতঃ কিছু বাদও দিই, তাহলেও উনি অখুশি হবেন না। এঁর মধ্যে কিছু লেখা আবার স্বর্ণপদকজয়ী। তো, সেই গুণীশ্রেষ্টদের উপস্থিতি উনি একান্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন। রিগার্ডস...ইত্যাদি। পেয়াদা প্রস্থান করিল।
দিনটা এখনো মনে আছে। নোংরারকম বৃষ্টি হচ্ছে। প্রায়ান্ধকার ঘরে আমরা গুটিপাঁচেক বসে এ ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছি। সামনে জলজ্যান্ত বারুদ। কেউই নেড়েচেড়ে দেখার সাহস পাচ্ছি না। শেষে আর থাকতে না পেরে বাতি জ্বালিয়ে প্যাকেট উন্মোচন করলুম। একতাড়া ফুলস্কেপ কাগজ বার হল।

No comments:

Post a Comment