Friday, 23 September 2011

নক্সী কাঁথা মন - ৫


জন্ম জন্মান্তর মানেন? আমি মানি মশাই, সেকারণে ট্রাম দেখলে ভয় পাই। (ইনিশিয়ালি অবশ্য পেতাম না। তারপর অব্যেস হয়ে গেছে।) থিয়সফিক্যাল ব্যাপার-স্যাপারে আমার বেজায় আগ্রহ। মাদাম ব্লাভাৎস্কিকে মাথায় করে রাখি। ফলে বিভিন্ন স্থানে আত্মার অবিনশ্বরতা নিয়ে তুমুল তর্কে যোগদান করি। খালি, ঐ যেবার ঘোতন আঁক কষে দেখাল আত্মা ইকোয়ালটু জিরো, সেদিন অবশ্য একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিল। চারটে সেলাই আর চোয়ালে ব্যাথা নিয়ে
যাক গে, মোটকথা আত্মা-ফাত্মা, ভূত প্রেত সাপ ব্যাঙ টিকটিকি এসব নিয়ে আমি খুব সিরিয়াস। আলোচনায় ফিলসফির সাথে থিয়সফি মিশে গেলে তো কথাই নেই। তখন নাকি আমার মাথার পেছনে ফসফরাস মার্কা গ্লো দেখা যায়। আমি অবশ্য এই নিয়ে অর্বাচীনদের ফিসফিসে কান দিই না। জীবনে আধ্যাত্মিকতাই আসল।
এত সব বলার কারণ হল, ব্রাউন প্যাকেটের ঝুলির ভেতর থেকে দ্বিতীয় যে বেড়ালটি বেরোল তার শিরোনামআত্ম চাহিদা। কবিতা নয়। দস্তুরমতো প্রবন্ধ। ফিলসফি ফিলসফি গন্ধ। মনের ভেতর কেমন গদগদ ভাব টের পেলুম। এই হল গিয়ে প্রকৃত প্রবুদ্ধ মনের শিল্পিত ভাস্কর্য। ওইসব কবিতা-ফোবিতা তো ছেলে ছোকরাদের চ্যাংড়া মনের ল্যাঙড়া প্রেম। প্রবন্ধ লেখার জন্য যেবিদগ্ধমন দরকার তা কয়জনার আছে। সেই প্রবন্ধের কীয়দংশ এক্ষণে উদ্ধৃত করিব।

প্রথম অনুচ্ছেদঃ

কী কী করিলে আত্ম তুষ্ট হয় ইহা আমাদিগের আত্মাকে প্রশ্ন করিলে তাহার কি বা কেমন উত্তর হইবে, কী ভাবেই বা তাহার উত্তর দিয়ে থাকিবে সেই সকল সম্মন্ধে কেবল আমাদিগের আত্মাই জ্ঞাত। উপরন্তু ইহা এমনই একনিষ্ঠ প্রকারান্তরের মধ্যম বস্তু হইয়া একস্থানে নতুবা তুষ্টের ত্বরে অন্য কোন স্থানে গমনাগমনে উদবিঘ্ন হইয়া থাকে ইহার চারিত্রিক ত্রুটি বিচ্যুতি বৈচিত্রময়। আবার তাহা ইহাকেই গমনাগমনে উদ্ভিঘ্ন করিয়া চাঞ্চল্য কর এক বিচ্ছিন্ন প্রকৃতি প্রস্তুত করিবার তরে সদা প্রস্তুত। অভিমুখ ত্রুটি ইহার সর্বাপেক্ষা নান্দনিক বিষয় বলিয়া, ইহা অন্তর ধ্যান করিয়া সেই সুচারু অভিমুখে, যেখানে ইহাকেই সকল পাইবে ভাবিয়া থাকে।

না, ভূমিকম্প হয় নি। যা লিখিত ছিল তাহাই বিধৃত করিয়াছি। কিন্তু ভাষার সতেজ ভাবটা লক্ষ্য করেছেন কি! উত্তরের মধ্যেই প্রশ্ন, এবং প্রশ্নের মধ্যেই উত্তরের আত্মগোপনটা দাদাআআআ কেমন সহজ করে বুঝিয়েছেন। এরকম অনেকটা দেখা যায় প্যান আমেরিকান কালচরে বা ইনকাদের পিরামিডের ওপর। প্রথম অনুচ্ছেদ পড়েই মাইরি মনটা গভীর শান্তিতে জুড়িয়ে গেল। চারপাশে টের পেলুম অপার স্নিগ্ধতা জুড়িয়ে এসেছে। মস্তিষ্ক চিরকাল মোর শিরঃপীড়ার প্রধান কারণ, এক্ষণে সেটি জবুথবু হওয়ামাত্র ইন্দ্রিয়াতীত সুখ টের পাইতেছি। ভাবরসে শান্তিপুর ডুবুডুবু। মনে হইল, সত্যই বটে, আত্মা শালা কখন কি করিবে কেমনে জানিব! গেছোদাদার মতো কোথায় রয়েছে তা জানাও না-মুমকিন। বউয়ের বেহিসেবি বলিয়া তিরষ্কার, প্রকৃতপক্ষে ঐ নান্দনিক বিষয়। মূর্খ স্ত্রীলোক, না বুঝিয়াই প্রশংসা করিয়া ফেলিয়াছে। যাহা হউক, পরের অনুচ্ছেদে কি রহিয়াছে?

যাহারা ইহাকে একান্ত ভাবেই আপন করিয়া লইয়াছে তাহারা জীবনে ইহার হস্ত যূপকাষ্ঠে বলি হইয়া নিঃশেষ হইয়া গিয়াছে। ইহাও একটি ইহার বৃহৎ বৈশিষ্ট্য। ইহা কাহাকেও পর বলিয়া ভাবিয়া থাকে না। অপরকে আত্মহনন পূর্বক ইহা সবারে আপন করিয়া নিজ নিজ রুটে টানিয়া লয়। আর যাহাদের ইহার ত্বরে দূর্বলতা থাকিয়া থাকে তাহাদিগের তো কথাই নাই।

ব্যস্‌, হয়ে গেল। স্বল্পক্ষম মানব আমি, ‘আমাদিগেরআর কি কথাই বা থাকবে। ইহাই তো ইহার বৈশিষ্ট্য। আপ্তবাক্য শুনে ভীষণরকম ঘেমে গেলুম। অনেকটা সেই প্যালারামের বাঘের গর্তে পড়ার পরের দশাটুকুর মতো। গর্তের মধ্যে আমি, বাঘ, শজারু আর দাদাআআআ। আমি শজারুকে আত্মহনন করছি, শজারু বাঘকে, বাঘ দাদাআআআ কেপ্রত্যকেই নিজেদের রুটে একে অন্যকে টানছি। আয় আয়, বেলেঘাটা ডায়মন্ডহারবার রানাঘাট তিব্বত। কিন্তু কেউ আসছে না। আসবে কি করে, সকলেই তো যূপকাষ্ঠে রয়েছে, মায় শজারুটা অবধি। শিহরিত হয়ে ভাবছি বৃথাই এ জীবন, মিথ্যেই এ স্তোকবাক্য, কি আর হবে, যাই গিয়ে এগরোল খাই। অমনি দাদাআআআ-র সাবধানবাণী,

যাহারা অত্যন্ত বেশী খাইয়া থাকে, তাহাদিগকে উদর পূর্ত করিয়া খাওয়াইলেও যেমন তাহাদিগের মনঃপুত হয়না, নিন্দুকদিগের পশ্চাদে অতি কঠিন কৃচ্ছসাধন করিয়া থাকিলেও নিন্দা ও ভর্তসনা শুনিতে হয়, তেমনই ইহার প্রতি যতই উৎসর্গ করিয়া থাকিলেও অন্তঃদিন পর্যন্ত ইহা চাহিয়া থাকিবে।

ভেঙে পড়লুম। হতভাগা পেট! ক্রমাগত পেটের দিকে চাহিয়া বসিয়া থাকাই সার। খালি খাও খাও, দাও দাও। ভর্তসনা শুনে সোনা মুখে বগল বাজাও। বঙ্কিমচন্দ্র এজন্যই বলেছিলেন, ‘আহার নিদ্রা ও মৈথুন। এ চলতে পারে না। পলিটব্যুরো নাকি? গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা থেকে বেরোতে হবে। কিন্তু গুরু কই? সাধন কি প্রকারে?

বন্ধুরা ও শুভানুধ্যায়ীরা এসে পরামর্শ দিল, ‘তুমি বরং একবার দাদাআআআর সাথে দেখা করো।

No comments:

Post a Comment