—‘বোড়ের
পাশের গজের কথা ভাবছ না যে বড়। ও শ্যামরতন, শেষে বয়সকাল বুঝি ছাপ ফেলল!’
—‘উঁহু, ও তোমার চাল
জানি, বুদ্ধি
পাকছে হে। বয়স হচ্ছে, বুদ্ধি
পাকছে। গজের প্রতি মায়া নেই। মন্ত্রীই আসল। কাল পালায় দেখলে না!’
—‘...’
—‘তবে
এবার ততটা জমে নি। বায়না কম পড়েছিল। শেষে ঝাড়গ্রামের কেষ্টবিষ্টুরা সব...এই
আমাদের নলিন, এরাই
তো শেষে হাল ধরেচে। নইলে... জ্যারকেন টা একটু উস্কে দাও দেখি।’
—‘তোমার
নাতি ফিরচে কবে?’
—‘কারিগর
ছাড়তে চাইলে তবে তো। হাতের কাজ ভাল। ছাড়বে কেন। এই তো নিয়ম। সামলাও সামলাও নৌকো
সামলাও’
—‘...’
—‘...’
—‘শ্যামরতন’
—‘উঁ’
—‘কাল
চরের মাঠের ঘটনা কি সত্যি।’
—‘তাই
মনে হয়। সনাতনের জ্বর আজকেও তো নামেনি।’
—‘সত্যি
দেকচে তাহলে?’
—‘আরে, ও তো আমিও
দেকিচি কতবার। সদার বাপ সেজে ডাকতে আসত, মনে নেই? জংলার চরে, মোহানার কাছটা, এত এত মাছে পড়েছে জালে, বুঝলে। এদিকে
আমার খিড়কির কাছে এসে বলছে, খোল আমি সদার বাপ। আর ওদিকে গিয়ে বলছে, শ্যামরতন এলুম
গো, দোর
খোল বৌঠান। সিকির দাদুও দেখছেখন। সনাতনের অল্প বয়স কিনা, তাই ভয়
পেয়েছে। সবসময় লোহার শেকল রাখতে হয়।’
—‘...’
—‘...’
—‘শীত
বাড়ল যে শ্যামরতন। যাবার সময় জ্যারকেন নিয়ে যেও খন। দাদুভাইকেও সঙ্গে নিয়ে
যেও। এবার জমি কেমন, চাষ
কেমন বুঝছ—’
ক্রমশঃ ধূ ধূ রাত বাড়ে। ইঁটভাটি, ঝিঁঝিঁ পোকা, আশশ্যাওড়া বেয়ে চলাফেরা বাড়ে। রুপোলী আঁশ মাখা
জাল ছুড়ে দেয় কেউ চরজংলায়। তালপাতা বোনা ঘর উঠোন দোর আদুল গায়ে মাখে রাত।
হাজার হাজার অশরীরী ভিড় করে আসে জলাভূমি, ডুলুং নদী, তপোবন, নিশিকান্তর পালা পেরিয়ে ভূতপতরীর মাঠে। তাদের ভীড়ে
মিশে আমিও ফিরে পড়ি সেইসব ধ্বসে পড়া ভিটেমাটিচুড়োয়, যেখানে এখনো
প্রতিদিন আবছায়া পূর্ব্বপুরুষ অক্লান্ত ভাবে এগিয়ে দেয় ঘোড়ার আড়াইহাত।
নিবুনিবু হ্যারিকেন সমেত।
No comments:
Post a Comment